আমাদের যে কোন পণ্য অর্ডার করতে কল বা WhatsApp করুন: 01301550011
ইরানী চেলো কাবাব

ইরানের জাতীয় খাবার চেলো কাবাবের ইতিহাস ও রেসিপি – 

ইরান যুদ্ধ নিয়ে যখন অনেক আলোচনা ও আবেগ কাজ করছে, চলুন আজ আমরা জেনে নেই ইরানী বা পারস্য একটি প্রাচীন রেসিপি যার নাম চেলো কাবাব। ইরানি কালচার ও খাবার সম্পর্কে জানতে হলে আপনাকে চেলো কাবাব খেতে হবে।  চেলো কাবাব (Chelow Kebab) শুধু ইরানের একটি জনপ্রিয় খাবারই নয়, বরং এটি ইরানিয়ান জাতীয় পরিচয়ের একটি গর্বিত অংশ। এর ইতিহাস, সংস্কৃতি ও পরিচয় একাধিক দিক থেকে সমৃদ্ধ।

প্রাচীন পারস্যে কাবাবের উৎপত্তি:

কাবাবের ধারণা পারস্যে প্রায় ৫০০ খ্রিস্টপূর্ব সময় থেকে চলে আসছে, যখন যোদ্ধারা বা গোষ্ঠীগুলি কাঠিতে মাংস গেঁথে আগুনে ভেজে খেতো। এই প্রক্রিয়া পরে কাবাব নাম পায়, যার ফারসি মানে ‘ভাজা মাংস’।

“চেলো” শব্দের অর্থ: সাদা বাসমতি চালের ভাত (সাধারণত জাফরান ও মাখন সহযোগে পরিবেশিত)। ১৯শ শতকের শেষদিকে কাজার রাজবংশের সময় ইরানে এই ‘চেলো-কাবাব’ জনপ্রিয়তা পায়, বিশেষ করে তেহরানের অভিজাত রেস্তোরাঁগুলোতে। এটি ধীরে ধীরে রাজসিক ভোজ থেকে সাধারণ মানুষের খাবারে রূপ নেয়।

চেলো কাবাবের সাংস্কৃতিক গুরুত্ব:

ইরানে কোনো উৎসব, পারিবারিক জমায়েত বা ভোজনবিলাস চেলো কাবাব ছাড়া অসম্পূর্ণ। তাছাড়া কাবাব তৈরির পদ্ধতি, চাল রান্নার প্রক্রিয়া ও পরিবেশনের সৌন্দর্য  সবই একধরনের সাংস্কৃতিক নান্দনিকতা বহন করে। তেহরানে এক সময় ছিল “Chelokababi” নামে ছোট দোকান, যেখানে কেবল চেলো কাবাবই বিক্রি হতো। বহু ইরানিয়ান প্রবাসীর কাছে এটি “ঘরের স্বাদ” বা “nostalgia” হিসেবে বিবেচিত।

কাবাবের প্রকারভেদ:

চেলো কাবাব মূলত চালের সঙ্গে পরিবেশিত হয় নিচের যেকোনো এক বা একাধিক কাবাব দিয়ে—

  • কাবাবে কুবিদে (Koobideh): মিহি কিমা দিয়ে তৈরি
  • কাবাবে বার্গ (Barg): গরু বা খাসির ফিলেট
  • জুজে কাবাব (Joojeh): মুরগির টুকরা দিয়ে
  • শিশলিক কাবাব: হাড়যুক্ত মাংস

আজ আমরা মিহি কিমা (কাবাবে কুবিদে) দিয়ে ইরানিয়ান স্টাইলে চেলো কাবাবের রেসিপি জেনে নিব।

চেলো কাবাব রেসিপি (৪ জনের জন্য)
কাবাবের উপকরণ (Koobideh Style):
  • গরুর কিমা: ৫০০ গ্রাম
  • পেঁয়াজ: ১টি মাঝারি
  • রসুন কুচি: ১ চা চামচ (ঐচ্ছিক)
  • লবণ: স্বাদমতো
  • গোলমরিচ গুঁড়া: ১/২ চা চামচ
  • শস্য জিরা গুঁড়া: ১/২ চা চামচ
  • শস্য হলুদ গুঁড়া (ঐচ্ছিক): ১/৪ চা চামচ
  • শস্য গাওয়া ঘি : গ্রিল করার সময় ব্রাশ করার জন্য
চেলো (সাদা বাসমতি ভাত) এর উপকরণ:
  • বাসমতি চাল: ২ কাপ (বাসমতি চাল না থাকলে শস্য চিনিগুড়া চাল দিয়ে আতব চালের ভাত ও করতে পারেন)
  • পানি: ৬ কাপ (ফুটন্ত)
  • লবণ: ১ টেবিল চামচ
  • শস্য ঘি: ২ টেবিল চামচ
  • জাফরান (গরম পানিতে ভেজানো): ১ চা চামচ
  • এক টুকরো আলু বা রুটি (তাহদিগ বা ক্রিস্পি নিচের লেয়ারের জন্য, ঐচ্ছিক)
 কাবাব প্রস্তুতি:
  1. পেঁয়াজ খুব মিহি করে কেটে নিন বা ঘষে রস বের করে ফেলে দিন, কেবল পেঁয়াজের মাংস ব্যবহার করুন (না হলে কাবাব ঝরে যেতে পারে)।
  2. কিমা, পেঁয়াজ, লবণ, মসলা মিশিয়ে ভালোভাবে ৫–১০ মিনিট ধরে মেখে নিন যতক্ষণ না মিশ্রণ চিটচিটে হয়।
  3. মিশ্রণটি ফ্রিজে ৩০ মিনিট রাখতে পারেন সেট করার জন্য।
  4. এরপর সিকর (লোহার কাবাব স্টিক) বা সাধারণ কাঠি ব্যবহার করে আঙ্গুলের মতো করে কিমা গেঁথে নিন।
  5. গ্রিল, বারবিকিউ বা গ্যাস ওভেনে প্রতিটি দিক ৭–৮ মিনিট করে রান্না করুন, মাঝে মাঝে ঘি ব্রাশ করুন।

চেলো (সাদা ভাত) প্রস্তুতি:

  1. বাসমতি চাল ধুয়ে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন।
  2. ৬ কাপ পানি ও লবণ দিয়ে ফুটান। চাল দিন ও মাঝারি আঁচে ৭-৮ মিনিট রান্না করুন (চাল যেন একটু শক্ত থাকে)।
  3. চাল ছেঁকে নিন।
  4. প্যানে ১ চামচ ঘি দিয়ে এক টুকরো রুটি বা আলু বিছিয়ে দিন (তাহদিগের জন্য)।
  5. তার ওপর চাল দিন, ঢাকনা দিন, নিচে কাপড় মুড়িয়ে ঢেকে ২০-২৫ মিনিট খুব অল্প আঁচে ‘দম’ দিন।
  6. ভাত হয়ে গেলে কিছু অংশে ভেজানো জাফরান ছড়িয়ে দিন (উপরে সুন্দর হলুদ রঙের জন্য)।
পরিবেশন:
  • বড় প্লেটে প্রথমে চেলো ভাত দিন।
  • উপরে গরম কাবাব রাখুন।
  • সঙ্গে দিন গ্রিল করা টমেটো, কাঁচা লেবু, পুদিনা পাতা বা তাজা সালাদ।
  • ইচ্ছা করলে একটু ঘি ভাতের উপর দিন।

টিপস:

  • খাঁটি ইরানিয়ান স্বাদ পেতে কাবাবে খুব বেশি মসলা ব্যবহার না করাই ভালো।
  • কাবাব হাতে গাঁথার সময় হাত ভিজিয়ে নিলে কিমা হাতে আটকাবে না।

ব্যাস, হয়ে গেল ইরানিয়ান চেলো কাবাব, যা ইরানীরা হর হামেশা উপভোগ করেন। তাদের এই বিশেষ খাবারটি চাইলে এখন আপনিও বাসায় প্রিয়জনদের সাথে উপভোগ করতে পারেন, নতুন কিছু ট্রাই করলেন।

Shopping cart

0
image/svg+xml

No products in the cart.

Continue Shopping